সাকিবের ফর্ম দেখে ‘কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ হাসে

হতাশার ব্যাপারগুলো আগে বলে ফেলা যাক।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাকিব আল হাসানের সর্বশেষ ফিফটি ১৯ ইনিংস আগে। ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর ক্রাইস্টচার্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে। এর মধ্যে দুই অঙ্কে পৌঁছেছেন ৯ বার। তিন সংস্করণ মিলিয়ে হিসাব করলে গত বছর ৬ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বশেষ ফিফটির দেখা পান সাকিব। গত মে মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দুটি ম্যাচ, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে একই সংস্করণের সিরিজে তিন ম্যাচ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই ম্যাচ—এই মোট সাত ম্যাচে সর্বসাকল্যে রান ৬৯।

 

এই ৭ ম্যাচে সাকিবের বোলিংও ঢাক ঢাক গুড় গুড় হয়ে বেজে চলা একটি প্রশ্নকে আরও জীবন্ত করে তোলে। এই ৭ ম্যাচে মোট ২১.৪ ওভার বোলিং করে ১৫৪ রানে সাকিবের শিকার মাত্র ৬ উইকেট। এর মধ্যে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। এরপর ৬ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটি ম্যাচে ১টি করে উইকেট পেয়েছেন সাকিব। শুধু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাকালে শঙ্কাটা আরও বেড়ে যায়। শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশের দুটি ম্যাচে সাকিব বোলিং করেছেন মোট ৪ ওভার! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ ওভারে ৩০ রানে উইকেটশূন্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে ১ ওভারে ৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুটি ম্যাচে সাকিব নিজের বোলিংয়ে ৪ ওভারের কোটা পূরণের সুযোগও পাননি। আরেকটু গভীরে তাকালে সবচেয়ে বড় শঙ্কার ব্যাপারটি টের পাওয়া যায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ওভারে ৪টি চার হজম করেছিলেন সাকিব। খেলোয়াড়টির নাম সাকিব বলেই হয়তো আরও একটি ওভার তাঁকে দিয়ে করিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। কিন্তু চতুর্থ ওভারটি তাঁকে দিয়ে আর করানোর সাহস কিংবা প্রয়োজন বোধ করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ১ ওভার বোলিং করার অভিজ্ঞতাটা সাকিবের জন্য পুরো ২০ ওভার খেলা হয়েছে এমন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেই প্রথম। এবার বলুন তো, প্রশ্নটি কেন উঠবে না?

বাংলাদেশ বোলিং কিংবা ব্যাটিংয়ে যে সাকিব প্রায় দেড় দশক ধরেই অন্যতম স্তম্ভ, সেই তিনিই কিনা এখন নিজের বোলিংয়ের কোটা শেষ করার সুযোগ পাচ্ছেন না! ব্যাটিংয়ে এ দুটি ম্যাচে সাকিবের খেলার এবং আউটের ধরন নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সব মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের সমর্থকদের মধ্য থেকেই প্রশ্নটি উঠেছে সবার আগে—৩৭ বছর বয়সী সাকিব কি তাহলে ফুরিয়ে যাওয়ার পথে?

চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়দের নিয়ে আগেভাগে নেতিবাচক কিছু বলতে নেই। তাতে লজ্জা পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। নিন্দুকদের মুখে সাকিব যে অতীতে এভাবে ঝামা ঘষে দেননি, সেটাও তো নয়। বলা হয়, সমালোচনাতেই সাকিবের সেরাটা পাওয়া যায়। অতীতে এমন বহুবার দেখা গেছে, ব্যাটে-বলে হয়তো ফর্ম নেই, তুমুল সমালোচনাও হচ্ছে মাঠের বাইরে। ঠিক তখনই হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো ম্যাচে কিংবা বড় মঞ্চে জ্বলে উঠেছেন সাকিব। এ নিয়ে উদাহরণও দেওয়া যায়। কিন্তু খেলোয়াড়টির নাম সাকিব বলে এবং সমর্থকেরাও তাঁর ঘুরে দাঁড়ানো দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠায় ওসব পরিসংখ্যানের পাতা বের করে না দেখালেও কিছু যায়–আসে না। লোকে সাকিবের ঘুরে দাঁড়ানো দেখে অভ্যস্ত। লোকে এটাও জানে, বেড়ে চলা বয়স ও বাজে ফর্মকে কাঁচকলা দেখিয়ে কেউ ঘুরে দাঁড়াতে পারলে সেটা সাকিবই পারবেন। তাহলে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও কি তেমন কিছু দেখার সময়টা চলে এল?